ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় স্ত্রীকে বদলির জেরে বিদ্যালয়ে তালা দিলেন স্বামী, শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ!

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের মোছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৪০জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষিকাকে অন্যত্র বদলী করায় ক্ষোভের জেরে ওই শিক্ষিকার স্বামী বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থার কারণে বর্তমানে গত চারদিন বিদ্যালয়টিতে তালা ঝুলছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, অভিভাবকসহ সর্বসাধারণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু জাফর রিপন ফরায়েজী জানান, মোছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আরেফা বেগমকে গত ৩০ মার্চ শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক আদেশে একই উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের মধ্যমকোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়।

স্ত্রীকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তার স্বামী আমিনুল মোস্তফা। এরই জেরে তিনি গত ৬ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। ঘটনাটি জানতে পেরে পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বাঁধা দিলে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অসৎ আচরণ করেন আমিনুল মোস্তফা। বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত হয়েছে।

আবু জাফর রিপন বলেন, এরআগেও বিদ্যালয়টির জন্য স্থানীয় নেজামউদ্দিন ছিদ্দিকী নামে একজন প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিকভাবে নিয়োগ দিয়ে পাঠালে যোগদানে বাঁধা দেন অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তাফা। সেই থেকে ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারছেন না।

প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের আদেশ প্রাপ্ত নেজাম উদ্দিন ছিদ্দিকী বলেন, ‘মোছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে আমি দায়িত্ব পালন করতে গেলে বাঁধা দেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আরেফা বেগমের স্বামী আমিনুল মোস্তফা। এমনকি আমাকে মারধর করতে উদ্যোত হন তিনি। এ কারণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবিহত করে আর ওই বিদ্যালয়ে যাইনি’।

চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, আমিনুল মোস্তাফা নিজেকে ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দাবী করেন। কিন্তু রেকর্ডেপত্রে তিনি কেউ নন। তার স্ত্রী আরেফা বেগম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওখানকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের জমিদাতা। এই সুত্রে আরিফা বেগম বিদ্যালয়ে অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে খবরদারি করে আসছিলেন।

সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ অভিযুক্ত বাঁধাদানকারী আমিনুল মোস্তফার স্ত্রী সহকারি শিক্ষিকা আরেফা বেগমকে নিকটস্থ ইউনিয়ন মধ্যম কোনাখালীতে প্রশাসনিকভাবে বদলীর আদেশ প্রদান করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর স্বামী আমিনুল মোস্তফা ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ কারণে ওই দিন থেকে ২৪০ ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে আছে।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রাথামিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে কেউ তালা ঝুলিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করলে এসএমসি‘র লোকজন কী করেন, ওদের কাজ কী? ওরা চাইলে আমাদের সাথে পরামর্শ করে এসবের প্রতিকার নিতে পারেন।

তিনি বলেন এরপরও বিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায় যারা জড়িত থাকুক তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন অবস্থাতে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারবেনা। #

পাঠকের মতামত: